একজন ব্রাহ্মণ পুত্র কি অন্য বর্ণের কন্যাকে বিবাহ করতে পারেন ?

 

নমস্কার বন্ধুরা, সনাতনী হিন্দু অনলাইন ওয়েবসাইটে আপনাদেরকে স্বাগতম। আপনাদের মধ্যে অনেকের ক্ষেত্রেই একটা  সাধারণ প্রশ্ন লক্ষ্য করা যায় যে একজন ব্রাহ্মণ পুত্র কি ব্রাহ্মণ ব্যতীত অন্য বর্ণের অর্থাৎ ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র বর্ণের কন্যাকে বিবাহ করতে পারেন ?

আজ আমি এই প্রবন্ধে  সনাতন ধর্মের শাস্ত্র থেকে এই প্রশ্নের উত্তর দেবো। 

হ্যাঁ বন্ধুরা সনাতন ধর্মের স্মৃতিশাস্ত্র ( মনুসংহিতা, বিষ্ণু সংহিতা ) এবং শ্রীমদ্ভাগবত  মহাপুরাণ এই ধরনের বিবাহের অনুমতি প্রদান করেন ।  ব্রাহ্মণ বর্ণের পুরুষের সাথে অন্য বর্ণের স্ত্রীর বিবাহের অনুমোদন ই শুধু নয় এবং সেই বিবাহের ফলে উৎপন্ন সন্তান [ ব্রাহ্মণ পুরুষ এবং শূদ্রা স্ত্রীর উৎপন্ন সন্তান ব্যতীত ]  যে দ্বিজ হবে সেই সম্পর্কেও স্পষ্ট নির্দেশ পাওয়া যায় মনুসংহিতা তে । 

তাহলে চলুন একে একে প্রমাণ গুলো দেখে নেয়া যাক।


শরঃ ক্ষত্রিয়য়া গ্রাহ্যঃ প্রতোদো বৈশ্যকন্যয়া । 

বসনস্য দশা গ্রাহ্যা শূদ্রয়োৎকৃষ্টবেদনে ।। ৪৪ ।।

                                           [ মনু সংহিতা  ৩/৪৪ ]


অনুবাদ — উৎকৃষ্ট বর্ণের সাথে বিবাহে অর্থাৎ ব্রাহ্মণ পুরুষ যখন ক্ষত্রিয়াকে বিবাহ করবেন, তখন ক্ষত্রিয়া কন্যা ব্রাহ্মণ-কর্তৃক নিজহাতে ধৃত শর (ধনুকের তীর) ধারণ করবে (অর্থাৎ ক্ষত্ৰিয়া ব্রাহ্মণকর্তৃক ধৃত তীরের প্রান্তভাগ ধরে থাকবে); আবার ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় পুরুষ বৈশ্যকন্যাকে বিবাহ করলে বৈশ্যা তার বরকর্তৃক ধৃত প্রতোদের (গোতাড়ন-যষ্টির) এক অংশ ধারণ করবে (অর্থাৎ হাত দিয়ে স্পর্শ করবে); এবং ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য পুরুষ শূদ্রকন্যাকে বিবাহ করলে, শূদ্রা ব্রাহ্মণাদির দ্বারা পরিহিত বস্ত্রের দশা (প্রান্তভাগ) ধারণ ক'রে থাকবে।

 [‘অস্ত্রধারণ' ক্ষত্রিয়ের জাতিগত ধর্ম, তাই ক্ষত্রিয়া ব্রাহ্মণের হস্তধৃত তীরের প্রান্তভাগ ধারণ করে থাকবে। কৃষি-কাজ ও গোপালন বৈশ্যের ধর্ম। গোতাড়ন যষ্টি বৈশ্যের জাতিগত বৃত্তির প্রতীক। তাই, বৈশ্যকন্যা তার উচ্চবর্ণের পতির হস্তধৃত প্রতোদ স্পর্শ করে থাকবে। শূদ্রাস্ত্রী তার উচ্চবর্ণের পতির বসনাঞ্চল ধারণ করবে। এটি শূদ্র জাতির সেবাধর্মের প্রতীক ব'লে মনে হয়। অনুলোম বিবাহে নিম্নবর্ণের কন্যা উচ্চবর্ণের বরের হস্তধৃত ঐ সব প্রতীক স্পর্শ করবে।] ৷৷


অথ ব্রাহ্মণস্য বর্ণানুক্রমেণ চতস্রো ভাৰ্য্যা ভবন্তি ॥ ১ ॥ 

তিস্রঃ ক্ষত্রিয়স্য ॥ ২॥ 

দ্বে বৈশ্যশ্য ॥ ৩॥ 

একা শূদ্রস্য ॥ ৪॥ 

তাসাং সবর্নাবেদনে পাণির্গ্ৰাহ্যঃ ॥ ৫ ॥ 

                      [ বিষ্ণু সংহিতা ২৪/১-৫ ]


অনুবাদ —  বর্ণানুক্রমে ব্রাহ্মণের চারি ভার্য্যা হইতে পারে । ক্ষত্রিয়ের তিন, বৈশ্যের দুই এবং শূদ্রের এক । (যথা,—ব্রাহ্মণের ভার্য্যা ব্রাহ্মণী, ক্ষত্রিয়া, বৈশ্যা ও শূদ্রা; ক্ষত্রিয়ের ক্ষত্রিয়া, বৈশ্যা এবং শূদ্রা ইত্যাদি । ) সবর্ণবিবাহে স্ত্রীলোকেরা পাণিগ্রহণ করিবে ৷৷


গৃহার্থী সদৃশীং ভার্যামুদ্বহেদজুগুপ্তিসতাম্। 

যবীয়সীং তু বয়সা যাং সবর্ণামনুক্রমাৎ।। 

         [ শ্রীমদ্ভাগবত-মহাপুরাণ ১১/১৭/৩৯ ]


অনুবাদ —  হে প্রিয় উদ্ধব ! ব্রহ্মচর্যাশ্রম ত্যাগ করে গৃহস্থাশ্রমে প্রবেশেচ্ছুক ব্রহ্মচারীর পক্ষে নিজ অনুরূপ এবং শাস্ত্রোক্ত লক্ষণযুক্ত সম্পন্ন কুলীন কন্যার সঙ্গে বিবাহ করাই শ্রেয়। এই অবস্থায় কন্যা বয়সে কনিষ্ঠ এবং নিজ বর্ণের হওয়া উচিত। যদি আসক্তিবশত অন্য বর্ণের কন্যাকে বিবাহ করবার প্রশ্ন জাগে তাহলে ক্রমশ নিজ বর্ণ থেকে নিম্ন বর্ণের কন্যার সঙ্গে বিবাহ করতে পারে ৷৷


সজাতিজানন্তরজাঃ ষট্ সুতা দ্বিজাধর্মিণঃ। 

শূদ্রাণান্তু সধর্মাণঃ সর্বেঽপধ্বংসজাঃ স্মৃতাঃ ।।

                                          [ মনুসংহিতা ১০/৪১ ] 


অনুবাদ —  দ্বিজাতিগণের নিজ নিজ বর্ণোৎপন্ন তিনটি এবং অনন্তর বর্ণোৎপন্ন [ অর্থাৎ অনুলোমক্রমে জাত ] তিনটি এই ছয়টি সন্তান দ্বিজধর্মাবলম্বী হবে [যেমন, ব্রাহ্মণ পুরুষের ব্রাহ্মণীজাত সন্তান, ক্ষত্রিয়ের ক্ষত্রিয়াজাত সন্তান এবং বৈশ্যের বৈশ্যজাত সন্তান – এই তিন সন্তান দ্বিজধর্মযুক্ত। অনন্তরজ অর্থাৎ অনুলোমজ সন্তানেরা হ'ল ব্রাহ্মণ পুরুষ থেকে ক্ষত্রিয়া নারীর ও বৈশ্যা নারীর গর্ভজাত সন্তান এবং ক্ষত্রিয় পুরুষ থেকে শূদ্রানারীর গর্ভজাত সন্তান —এই তিনজনও দ্বিজধর্মযুক্ত; কাজেই এই ছয় সন্তান উপনয়নাদিদ্বিজাতিসংস্কারযোগ্য হবে; আর উপনয়ন হ'লে দ্বিজাতির করণীয় সকল প্রকার ধর্মেই এরা অধিকারী হবে।]। কিন্তু যারা অপধ্বংসজ অর্থাৎ প্রতিলোমসঙ্করজাত সূত প্রভৃতি জাতি, তারা শুদ্রের সমান আচারযুক্ত অর্থাৎ শূদ্রোচিত ধর্মেরই অধিকারী, সেই কারণে তাদের উপনয়নসংস্কার নেই ৷৷ 


Sanatani Hindu Online

Post a Comment

0 Comments